জাকির হোসাইন:
আমাদের অনেকের মধ্যেই কথা দিয়ে কথা না রাখার প্রবণতা রয়েছে। আবার অনেকে তুচ্ছ ব্যাপারে বা ঠাট্টা করে চোখেমুখে মিথ্যা কথা বলি। কারো জিম্মায় কিছু আমানত রাখলে, তার খেয়ানত তো অনেকে হরহামেশাই করে থাকি।
অনেক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বিশ্বাস করে বন্ধুর কাছে টাকা দিয়েছিলাম আমার জন্য জমি কিনতে। কিন্তু পরে জানতে পারি বন্ধু জমি ঠিকই কিনেছেন, কিন্তু আমার নামে না, তার নিজের নামে। মানে আমার জমি-টাকা দুইই গায়েব।’’
আর কারো সাথে ঝগড়া হলে তো কথাই নেই, তাকে যা ইচ্ছা তাই বলে গালিগালাজ করি। এ কাজটি শুধু অশিক্ষিত ব্যক্তিরাই করেন এমন নয় বরং তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে কয়েকধাপ এগিয়ে রয়েছেন।
প্রাত্যহিক জীবনে এরকম আমরা প্রায়শই দেখি বন্ধুদের ক্ষেত্রে। বন্ধুরাই বেশিরভাগ সময় দেখা যায় কথায় বেঈমানি করে। অনেকে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, ব্যবহারের জিনিসপত্র ধার নেয়। কিন্তু ফেরত নেবার বেলায় অপরাগ। বুঝতে চাইনা, জিনিসটা তারও খুব দরকার। অাবার টাকার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অনেক সময় বন্ধুরা ফেরত না দেবার মন মানসিকতাই বেশি দেখায় কিংবা ফেরত চাইলেও দেয় না।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে যাবার প্ল্যান করে, কিন্তু যাবার বেলায় সেদিন বিজি হয়ে যায়, সেদিন বাড়িতে খুব কাজ থাকে, পাশের বাড়িতে বিবাহ চলে সেদিন সেজন্য তার ওপরে দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে, আর না হয় বাড়িতে মেহমান আসে। আসলে বাস্তবিক পক্ষে সেদিন এসব অজুহাত মাত্র, মানছি সেদিন হয়তো কিছু না কিছু কাজ থাকতেই পারে। তবে আমাদের উচিত সবদিক বিবেচনা করে কাউতে কথা দেয়া, সেটা বন্ধু হোক কিংবা অন্যান্য মানুষ হোক।
উল্লিখিত স্বভাবগুলোকে আমরা তেমন কোনো বড় গুনাহের কাজ বলে মনে করিনা। এগুলো যেন কোনো ব্যাপারই না।
অথচ হাদিসে রয়েছে,
‘‘আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি-
১. যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে
২. যখন অঙ্গীকার করে, তা ভঙ্গ করে এবং
৩. আমানতের খেয়ানত করে। ’’ (বুখারী-২৬৮২, মুসলিম ১/২৫)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
এগুলো হচ্ছে-
১. আমানতের খেয়ানত করে
২. কথা বললে মিথ্যা বলে
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে
এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি করে। ’’ (বুখারী-২২৫৯, মুসলিম ১/২৫)
আর মুনাফিকের শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরানে রয়েছে,
‘‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিকৃষ্ট স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনও কোনো সাহায্যকারী পাবে না|’’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৫)
তবে মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, তাই আমাদের কারো মধ্যে যদি এ রকম কোনো স্বভাব থাকে তাহলে এখনই তা ত্যাগ করে তওবা করা উচিত।
আমাদের উচিত কথা ও কাজে এক থাকা, আর এসব মুনাফিকি কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা।
জাকির হোসাইন
তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম কলেজ